এখন বিদেশি কোচদের বরখাস্ত করা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এ নিয়ে টানা তিনজন কোচকে বরখাস্ত করল বিসিবি। স্টিভ রোডসকে দিয়ে বরখাস্তের সংস্কৃতি চালু করেন নাজমুল হাসান পাপন। রাসেল ডমিঙ্গোকেও মেয়াদপূর্তির আগেই বরখাস্ত করা হয়। হাথুরুসিংহেকেও বাদ দেওয়া হলো চুক্তির মেয়াদ থাকতে। বিশ্বের কাছে যেটা ভালো বার্তা দিচ্ছে না বলে মনে করেন ক্রিকেট- সংশ্লিষ্টরা। বৈশ্বিক ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ চালু হওয়ার পর থেকে এমনিতে তারকা কোচরা দীর্ঘ মেয়াদে কোনো দেশের দায়িত্ব নিতে চান না।
সেখানে টানা তিনজন কোচকে বরখাস্তের ঘটনা বাংলাদেশের চাকরিতে নিরুৎসাহিত করতে পারে বলে শঙ্কা ক্রিকেট- সংশ্লিষ্টদের। গত ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ চলাকালে দুই ম্যাচের মধ্যে লম্বা বিরতি থাকায় মাশরাফি বিন মুর্তজাদের ছুটি দিয়েছিলেন স্টিভ রোডস। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন যেটাকে ভালোভাবে নেননি। বিশ্বকাপ শেষে রোডসকে ঢাকায় ডেকে এনে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। ইংলিশ কোচ বিসিবির সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে দেশে ফিরে যান।
এদিকে উত্তরসূরি হিসেবে খণ্ডকালীন দায়িত্ব পান খালেদ মাহমুদ সুজন। তাঁর অধীনে শ্রীলঙ্কা সফরে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। পরে রাসেল ডমিঙ্গোকে নিয়োগ দেয় বিসিবি। প্রথম মেয়াদ ভালোভাবেই পার করেন তিনি। ভালো মানের কোচিং সাপোর্ট স্টাফ নিয়ে সফলও ছিলেন। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পরও বরখাস্ত হতে হয় ডমিঙ্গোকে। রোডস ও ডমিঙ্গো রাজনীতির শিকার ছিলেন।
তাদের বাদ দেওয়ার পেছনে বিসিবির সাবেক দু'জন পরিচালকের হাত ছিল। হাথুরুসিংহেকে বাদ দেওয়া বাংলাদেশ বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের একক সিদ্ধান্ত বলে জানা গেছে। গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান কোচকে বরখাস্ত ও নতুন কোচ নিয়োগের ব্যাপারে জানান। হাথুরুসিংহেকে বাদ দেওয়ার কারণ শৃঙ্খলা। ২০২৩ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ম্যাচ চলাকালে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে।
ফারুক জানান, মূল্যায়ন কমিটির রিপোর্টে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন কোচ। যেটাকে গর্হিত অপরাধ হিসেবে দেখা হচ্ছে। মুলত রাগই কাল হলো হাথুরুর। হাথুরুসিংহের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শেষে। সাড়ে পাঁচ মাস আগেই বিদায় নিতে হচ্ছে তাঁকে।
এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে বিসিবির সাবেক পরিচালক আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি বলেন, 'যে যে কোচকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্র ভিন্ন। এখন যাকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার পেছনেও কারণ আছে। যারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ভেবেচিন্তেই নিয়েছেন হয়তো।'
এদিকে নাজমুল হোসেন শান্তরা পাকিস্তানকে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করায় বাহবা পান কোচ। ভারত সফরে ভালো করলে কোচকে বাদ দেওয়া সহজ হতো না। টেস্ট ও টি২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ায় ফারুকের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী হাথুরুসিংহেকে তিন মাসের বেতন দিতে হবে বরখাস্তের কারণে। কিন্তু বিসিবি সেটা দিতে চায় না ৪৫ দিনের জায়গায় তিন মাস ছুটি উপভোগ করায়।
এখন বাস্তবতা হলো, হাথুরুসিংহেও ছেড়ে দেওয়ার মতো মানুষ নন। আইনজীবীর মাধ্যমে বিসিবিকে কারণ দর্শানোর জবাব দেবেন আজ। বাংলাদেশ থেকে চলে যাওয়ার আগে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে চান তিনি। হাথুরুসিংহের জায়গায় নিয়োগ পাওয়া নতুন কোচ ফিল সিমন্স দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে দায়িত্ব পালন করবেন। বিসিবি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আজ ঢাকায় পৌঁছাবেন তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত কাজ করবেন ক্যারিবীয় এই কোচ।